পোস্টপার্টাম সাইকোসিস নিয়ে একটি গল্প
Matritto logo

জীবনের জন্য উপকারী জ্ঞান

আসসালামু আলাইকুম।

মাতৃত্ব থেকে ইসরাত আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি মাতৃত্ব সাপ্তাহিক পড়ার জন্য।

গত সপ্তাহে একটা ফেসবুক গ্রুপে পোস্টপার্টাম সাইকোসিস নিয়ে একটা গল্প পড়লাম। এত হৃদয়বিদারক গল্প সেটা বলা বাহুল্য। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এই গল্প হয়তো অনেকটাই সত্যি, তাই দেরি না করে লেখিকাকে নক করলাম মাতৃত্ব পেইজে লেখাটা রিপাবলিশ করার অনুমতি চেয়ে। বেশ বড় এই গল্পের একটা অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি, যদি আগ্রহ পান, তবে এখানে বাকীটা পড়তে পারবেন

যারা প্রথমবারের মতো এই মেইল পাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, প্রতি সপ্তাহে আমরা সাইটে প্রকাশিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি আপনাকে মেইল করে দিই। এছাড়াও অন্যান্য লেখাগুলোর লিংক থাকবে। যেটা ভাল লাগে ক্লিক করে পড়তে পারবেন।

"পোস্টপার্টাম সাইকোসিস"

ঠিক এই মূহুর্তে আমার মন চাইছে সাত মাসের বাচ্চাটাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটা বেজে পনেরো মিনিট।
অস্থির লাগছে।
আমি আর নিতে পারছি না।মাথাটা যেন ফেটে যাবে মনে হচ্ছে।
মাথার দু পাশের রগ টনটন করছে।
চোখ দুটো অনবরত জ্বালা করছে।
দ্রুত বাচ্চাটাকে বিছানায় ফেলে বাথরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলাম।
এত রাত অথচ এই মূহুর্তে আমার পাশে কেউ নেই।
বাথরুমে কতক্ষণ ঝিম মেরে বসে আছি।
কানে তালা মেরে গেছে।
বাচ্চাটার তার স্বরে কান্না আমার মগজে আর ঢুকছে না।
কতক্ষণ এমন মরার মত ছিলাম মনে নেই।

খেয়াল করলাম
আমি রুমের দরজা পেছন থেকে চাপিয়ে বারান্দায় বসে ঝুকে বাইরের অন্ধকার দেখছি।
ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে, ঝি ঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি।
ঐ যে গলির দোকানের সামনে একটা লাইট জ্বলছে।
বাচ্চাটার শব্দ কানে আসছে না আর।
উঠে রুমে গেলাম।
ঘুমিয়ে গেছে।
এত অসহ্য লাগে বাচ্চাটাকে।
আমারই বাচ্চা।
ভালো লাগে না ।নিজের মরে যেতে ইচ্ছে করে।
কেন যে বাচ্চাটা হয়েছিলো!
কত মানুষ বাচ্চা চেয়ে আকুল হয়, সৃষ্টিকর্তা তো তাদের দিতে পারতেন।

এখন আমার শব্দ ভালো লাগে না।
শোরগোল হৈচৈ কিছুই ভালো লাগে না।

অনার্সে পড়ি।থার্ড ইয়ার।
গত বছর বিয়ে হয়েছে। এরেঞ্জ ম্যারেজ।
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের বিয়ে হয়েছে নিন্মমধ্যবিত্ত ঘরে।
কপালে থাকলে কি আর করা যাবে।
সব বাপ মা'ই চায় নিজেদের চেয়ে অবস্থা সম্পন্ন পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে।
শুনেছিলাম ছেলে মামার সাথে পার্টনারে ব্যবসা করে। কিন্তু বিয়ের পর দেখি ও মামার ওখানে চাকরি করে।
বাবা নেই, বৃদ্ধ মা নিয়ে ওর সংসার।
শাশুড়ী নিজেই অসুস্থ। কোনরকমে চলাফেরা করতে পারেন।
আমার বর অন্য শহরে থাকেন।সপ্তাহে একদিন বাড়িতে থাকেন।
কোন কোন সপ্তাহে কাজের চাপ থাকলে আসেন না।
আমার খারাপ লাগে না।উনি না এলে ঐ সপ্তাহে কাজের চাপ কম হয়।
উনি আসার আগে ভাগে আমার নাক মুখ খিঁচে কাজ করা লাগে।
রান্নাবাড়ার খুব আধিক্য না থাকলেও তখন বাসার আনাচকানাচে পরিষ্কার করতে হয়।

আমার শাশুড়ী ভালো মানুষ। কথা খুবই কম বলেন।
নিজের রুমে সারাদিন পরে থাকেন।
তিনটায় চারটায় খেতে দিলেও কিছু বলেন না।
নির্জীব মানুষটার জন্য আমার মায়া লাগে।
চেষ্টা করি দুই তিন ঘন্টা পরপর উনার সামনে কিছু খাবার দিয়ে আসতে।
উঠে দাঁড়াতে গেলেই কাঁপতে থাকেন।
কাপা কাপা পায়ে লাঠিতে ভর দিয়ে অজু গোসল সারেন।
কোনদিনও আমার জন্য গোসলের কাপড় ফেলে আসেন না।
বারান্দার এক কোনায় কাপড় ফেলে রাখেন।পানি এমনি ঝরে দুদিন পরে শুকিয়ে যায়।আবার সেটা পরেন।
আমার মনে পড়লে,চোখে দেখলে অবশ্যই সাথে সাথে আম্মার কাপড় তুলে তারে নেড়ে দিই।

ইদানীং আমি সবকিছু ভুলে যাই।
বিয়ের পরপর না চাইতেই বাচ্চা কনসিভ হয়ে গেছে। স্বামী বাড়িতে থাকে না।
শাশুড়ীকে ফেলে বাপের বাড়ি চলে যেতেও বিবেকে বাধত।
আমি বেশীরভাগ সময়ই এখানে থাকতাম।
আম্মা আরেকটু শক্ত-সামর্থ্য ছিলেন।
বমি করে যখন আমি আধমরার মতন বিছানায় লেপ্টে থাকতাম উনি কাপাকাপা হাতে আমার জন্য ডিম ভাজতেন।
ভাতের পাতিলটা একটা ঝুড়িতে উল্টে দিয়ে মাড় ঝরাতেন।
ক্লিষ্ট আমি ঘুমিয়ে যেতাম।খুব মাথা ঝিমঝিম করত।
ঘুম থেকে উঠে আম্মার রান্না করা ভাত খেতাম।
আমার খুব মায়া লাগত।

এই মানুষটাকে ফেলে রেখে আমি কিছুতেই বাড়ি যেতে পারতাম না।
মাঝেমাঝে উনি নিজেই আমাকে জোর দিয়ে বাড়ি যেতে বলতেন।
নিজে একলা থাকলে আরও কষ্ট পাবেন।সবসময় তো রেঁধে খেতে পারেন না।
আমিই রান্না করি।
তবু উনি চাইতেন আমি যেন বাপের বাড়িতে গিয়ে আরেকটু ভালোমন্দ খেতে পারি।
আমার ছাপোষা জীবনের কথা আমি কাউকে বলিনা।
বাপ মা বুঝেও না বোঝার ভান ধরেন।
আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এখানেই পড়ে থাকি।

আমার স্বামীর আচরণ আমি ঠিক বুঝতে পারিনা।
জানিনা বাচ্চা আসার খবরে সে খুশি হয়েছে কিনা।
থমথমে মুখে শুধু বলেছিলো, " নিজের খেয়াল রেখো"
একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসও গোপন করল মনে হলো।
অভাবের সংসারে অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা বিড়ম্বনার।

সেবার চলে যাওয়ার পরে পরপর দুসপ্তাহ সে বাড়ি আসেনি।
মাসের শেষ সপ্তাহে বাড়ি এসেছে। কিন্তু কোন উচ্ছ্বাস নেই।
মাসের বাজার একসাথে করে দিয়ে গেছে।
এইবার বাজারের সাথে নুডুলসের প্যাকেট,পেয়ারা,আমলকি বাড়তি ছিলো।

রাতে আমার সাথে কোন কথা বলেনি।
অপেক্ষায় থেকে আমি একসময় ঘুমিয়ে পড়েছি।
পরদিন চলে গেছেন আমার মনে আছে।
বুঝতে ছিলাম না উনি বাচ্চা আসার খবরে এত শীতল কেন হয়ে গেলেন।হয়ত অল্প আয়ই কারণ হবে।
মাস শেষ হওয়ার আগে আগেই আমার স্বামী আবার বাজার করে দিয়ে যেতেন।

আমাদের ফেসবুক পাতায় ১১হাজার বারের বেশি পঠিত এই গল্প অনেক পাঠকের হৃদয় ছুঁয়েছে, কারণ অনেক বেশি সংখ্যক পাঠক তার নিজের অভিজ্ঞতার সাথে এই গল্পের মিল পেয়েছেন।

পোস্টপার্টাম নিয়ে আপনার এরকম কোন অভিজ্ঞতা কি আছে? অথবা কীভাবে এই সময়টা ভালমতো ম্যানেজ করেছেন?

আপনার স্টোরি লিখে পাঠিয়ে দিন আমাদের মেইলে বা মেসেঞ্জারে

আরো লেখাগুলো এই সপ্তাহে পড়তে পারেনঃ

  • বিশ্বকাপের এই মৌসুমে খেলা না দেখার শর্তে এই প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারেন আপনিও।
  • দাম্পত্যে ইসলামের বিধিবিধান ও সামাজিক রীতিনীতির মাঝে ভারসাম্যের জায়গা নিয়ে লিখেছেন ইফতেখার জামিল
  • নিউজলেটারের এই অংশে আমরা বিভিন্ন লেখা, উদ্যোগ, চিন্তার কথা আমাদের ১২০০+ ইমেইল পাঠকের কাছে পৌছে দেই। আমাদের পাঠকদের সাথে এরকম কিছু শেয়ার করতে চাইলে এই মেইলের রিপ্লাই বাটন চেপে লিখতে পারেন।

মূলত যারা ফেসবুকে সক্রিয় নন, তাদের জন্য আমাদের নিউজলেটারের আয়োজন। আর ফেসবুকের বাইরে টেলিগ্রামে আমাদের গ্রুপচ্যানেলে যুক্ত হতে পারেন।

মাতৃত্ব পরিবারের একজন হিসেবে আপনি এই মেইল পাচ্ছেন।

মাতৃত্ব ডট কম
বাসা:১/বি, ভবন: ৭, স্বপ্নডাঙ্গা হাউজিং হাজারিবাগ, ঢাকা-১২০৭
https://matritto.com

ইমেইল পাওয়া বন্ধ করতে চান? আনসাবস্ক্রাইব