সন্তানকে 'মাছ ধরা' শেখানো
Matritto logo

জীবনের জন্য উপকারী জ্ঞান

আসসালামু আলাইকুম।

আমাদের বাচ্চারা যতো বড় হয়, ততই তারা নিজেদের পথ নিজেরা খুঁজে নেয়। নিজেদের মতো মতামত তৈরি করে। বাবা-মা হিসেবে এই বিষয়টা ঘটতে দেখা আমাদের জন্য একটু ভীতিকর ছিল। ভয় হয় এই বুঝি তারা ভুল করলো!

ক্লাস টু'তে পড়া মেয়ে একদিন বাবাকে জানালো 'অমুক' দেশ' বাংলাদেশের শত্রু। পাশেই কেজি'তে পড়া ছেলেটা নিজের মনে খেলছে। বাবা তার হাতের কাজ রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, তাহলে কোন দেশ আমাদের বন্ধু? মেয়ের কাছে এর জবাব নেই। কারণ আগের তথ্যটাও তার 'আহরিত' জ্ঞান।

বাবা ভাবলেন এটা intervene করার একটা জায়গা। তাই ছেলে ও মেয়েকে ডেকে নিজের দিকে মনযোগী করালেন।

- তোমাদের একটা গল্প বলি, কেমন?

- বলো

- একযুদ্ধে আমাদের রাসূল (সাঃ) একজন চাচা শহীদ হন এবং তার লাশের সাথে খুব খারাপ আচরণ করে কাফিররা।

মেয়ের মনে পড়লো আমার সাথে পড়া সীরাত গ্রন্থের কথা।

- হ্যা বাবা, ওনার নাক কান কেটে ফেলা হইছিলো।

- গুড। তোমার মনে আছে। উম্মে হিন্দা নামের এক মহিলা এই কাজ করেছিলেন। কেন করেছিলেন জানো? ঘৃণা থেকে। ইসলামকে কাফিররা ঘৃণা করতো, সেই ঘৃণা থেকে তারা অসম্ভব সব খারাপ কাজ করতো। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন মক্কা শহর জয় করলেন আর কাফিরদের হারিয়ে দিলেন, তখন কিন্তু তিনি এরকম কাজ করেন নাই।

- কি করছেন তখন?

- উনি সবাইকে মাফ করে দিয়েছিলেন। এখন তুমি বলো, তোমার চাচ্চুকে কেউ এভাবে মারলে তুমি কি তাকে তোমার শত্রু মনে করবা? তুমি তাকে সুযোগ পেলে পানিশমেন্ট দিতে না?

মেয়ে একটু দিধান্বিত, তবুও হ্যা বললো।

- ঠিক। কিন্তু আমাদের নবী (সাঃ) এরপরেও সবাইকে মাফ করে দিয়েছিলেন। এবং উনার এরকম ব্যবহারের কারণে তখন সবাই দলে দলে মুসলিম হয়ে যায়। এমনকি এই উম্মে হিন্দা ও মুসলিম হয়ে যান।

- তখন কি উনাকে পানিশমেন্ট দেয় নাই?

- না। কারণ যিনি মুসলিম হন, তার আগের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। আর পানিশমেন্ট তো শত্রুকে দেয়। ইসলাম আমাদের শেখায় যেন আমরা আমাদের বন্ধুত্ব করবো আল্লাহর কারণে। আমি আল্লাহকে ভালবাসি, তার রাসূলকে ভালবাসি। আরেকজন যে একইভাবে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) ভালবাসে সেও আমাদের বন্ধু। একই ভাবে যে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) শত্রু মনে করে, আমরাও তার শত্রু। বুঝতে পারছো?

তারা দুজনেই সম্ভবত বিষয়টা প্রসেস করার চেষ্টা করতেছে।

- মুসলিমদের শত্রুতা বা বন্ধুতা দুইটা ইসলামের জন্য। এজন্য যখন কেউ আমাদের বলবে ও আমাদের শত্রু বা ও আমাদের বন্ধু, তোমরা চিন্তা করবা তারা আসলেই আমাদের শত্রু বা বন্ধু কি না।

বাচ্চারা হ্যা-সূচক মাথা নাড়লো।

- আরেকটা কথা বলি। তোমরা যত বড় হবা, তত বেশি বাইরের সবার সাথে পরিচিত হবে, তোমার টীচার, তোমার বন্ধু এরা তোমাকে অনেক কথা বলবো। কখনো দেখবে আব্বু-আম্মুর কথা এদের সাথে মিলবে না। তখন তোমরা কার কথা বিশ্বাস করবা?

- তোমাদের কথা।

- গুড। কিন্তু এরপরও এমন সময় আসবে যখন তোমার মনে হবে মা-বাবা ভুল কথা বলতেছেন। তখন তুমি কি করবা?

স্বাভাবিকভাবে এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর বাচ্চাদের কাছে নেই।

- তখন তোমরা আল্লাহ'র কাছে বলবা, আল্লাহ আমি তো বুঝতে পারতেছি না কোনটা ঠিক। তুমি আমার মনকে যেট সঠিক সেটার দিকে নিয়ে যাও। বুঝতে পারছো?

মেয়ে দিধাগ্রস্থ হয়ে মাথা নাড়লো।

- দেখ, আল্লাহ হলেন আমাদের মনের মালিক। আমরা যা ভাবি সব আল্লাহ জানেন, তাই যখন তুমি বুঝতে পারবা না, তখনই তুমি আল্লাহর কাছে হেল্প চাইবা।

আপাতদৃষ্টিতে বাচ্চাদের এধরনের কঠিন নসীহতের খুব একটা ফায়দা নেই। কিন্তু বাচ্চাদের বাবার মতামতঃ বাচ্চারা বুঝুক না বুঝুক এসব কথার একটা ইমপ্যাক্ট ওদের মাঝে থাকে। সময়মতো তারা এই কথাগুলো মনে করে রিলেট করে নিতে পারবে।

গতকাল ডঃ ইসরার আহমেদের দারুন এই কথা গুলো শুনছিলাম। মানুষের জীবনে সমাজ ও পরিপার্শিকতার প্রভাব মারাত্মক। এই প্রভাব তারা সাফল্যের সংজ্ঞা ঠিক করে, বদলে দেয়। আর দুনিয়ার দেয়া সাফল্যের সংজ্ঞা তো ইসলামের শেখানো ধারণার বিপরীত।

বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় একটা শিশুর মতামত গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। মিডিয়া বিশাল ভূমিকা রাখছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র বাবা-মায়ের অধিকারে হাত দিচ্ছে। আমাদের দেশেও এমন সময় আসতে হয়তো আর বেশি দেরি নাই। আমাদের সন্তানরা এক 'মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের' মাঝে আছে যেখানে আশেপাশের সবকিছু তাদের বিপথে নেবার জন্য উদগ্রীব।

বাবা মা হিসেবে আমরা কী করতে পারি? আমাদের ধারণা আমরা বাচ্চাদের "মাছ ধরা" শিখাতে পারি। আমি নিজে সাফল্যের যেই সংজ্ঞাতে বিশ্বাস করি সেটা বাচ্চাকে শেখাতে পারি। তাদেরকে চিন্তা করার পথ শেখাতে পারি। এবং ইসলামকে তাদের চিন্তার বেসিস বানাতে হেল্প করতে পারি।

আর আন্তরিকভাবে আল্লাহ'র কাছে দোআ করতে পারি যেন তারা আমাদের পরকালীন মুক্তির কারণ হয়। কারণ নিঃসন্দেহে আল্লাহ হৃদয়সমূহের মালিক।

ছোট্ট একটা খবর

আমাদের প্রিনাটাল ১ম ব্যাচের ক্লাস প্রায় শেষের দিকে। এই ব্যাচের শেষ ৩টা ক্লাস সদ্য মা হয়েছেন বা গর্ভাবস্থার শেষে আছেন এমন মা'দের জন্য বেশ উপযোগী হবে। ক্লাসের টপিকগুলো এরকমঃ


১. ব্রেস্টফীডিং এর আদ্যোপান্ত – আফিফা রায়হানা

২. পোস্টপার্টাম সময়ে মায়ের যত্নআত্তি - লুবাইনা কায়েস

৩. নবজাতকের যত্ন - লুবাইনা কায়েস


আফিফা মাতৃত্ব'র একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সার্টিফায়েড চাইল্ড বার্থ এডুকেটর। এই বিষয়ে মাতৃত্ব সাইটে তার সব লেখা এখানে পড়তে পারেন

আর লুবাইনা দেশে ফুড এন্ড নিউট্রিশন এর উপরে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর ইন নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি বিষয়ে পড়ছেন এবং Werribee Mercy Hospital, Melbourne এর পোস্ট-নাটাল ওয়ার্ডে কাজ করছেন।


আপনি যদি উপরের ৩টা ক্লাসে যোগ দিতে চান, তাহলে মাতৃত্ব ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিন। বিনিয়োগঃ ২৫০টাকা।

এসপ্তাহের আরো খবরাখবর

  • আমাদের প্রিনাটাল ২য় ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জানুয়ারির ২য় সপ্তাহে ইনশা আল্লাহ ক্লাস শুরু হবে। মোট ০৮ সপ্তাহে ১৬টি ক্লাস, ক্লাস নোটস, প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপে কোর্স টীচারদের সাথে যোগাযোগ সহ আরো অনেক কিছু থাকছে আমাদের এই আয়োজনে। বিস্তারিত জানতে আমাদের মেসেজ দিন
  • এই শীতে শিশুগর্ভবতী মায়ের যত্নে কি কি করতে পারেন না নিয়ে জানতে পড়ুন এই দুইটি লেখা।
  • প্রিনাটাল ক্লাস কেন করবেন সেটা নিয়ে ইসরাত ও আফিফা বিস্তারিত লিখেছেন এখানে। সারকথাঃ একজন সন্তান সম্ভবা মা'কে তার জীবনের সম্পূর্ণ নতুন একটা জার্নিতে কনফিডেন্ট বানাতে এই ক্লাস। Highly recommended!
  • ঢাকায় মেয়েদের জন্য মসজিদ ও নামাযের জায়গার একটা তালিকা শুরু করেছিলাম ২০১৩ সালে। কপি করে রাখুন এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।

মূলত যারা ফেসবুকে সক্রিয় নন, তাদের জন্য আমাদের নিউজলেটারের আয়োজন। আর ফেসবুকের বাইরে টেলিগ্রামে আমাদের গ্রুপ ও চ্যানেলে যুক্ত হতে পারেন।

মাতৃত্ব পরিবারের একজন হিসেবে আপনি এই মেইল পাচ্ছেন। আগের নিউজলেটারগুলো এখানে পড়তে পারেন।

মাতৃত্ব ডট কম
বাসা:১/বি, ভবন: ৭, স্বপ্নডাঙ্গা হাউজিং হাজারিবাগ, ঢাকা-১২০৭
https://matritto.com

ইমেইল পাওয়া বন্ধ করতে চান? আনসাবস্ক্রাইব