বিতর্কিত এবং তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় আইকন এন্ড্রু টেইট এর একটা ভিডিও দেখলাম। ভিডিওতে এন্ড্রু কথা বলছিলেন বানরদের উপর চালানো একটা এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে।
একটা রুমে পাঁচটা বানরকে রাখা হলো এবং উপরের দিকে কিছু কলা ঝুলিয়ে দেয়া হলো। স্বভাবজাতভাবে একটা বানর কলাগুলো নেয়ার জন্য উপরে ওঠার চেষ্টা করল। যেইমাত্র বানর কলার কাছাকাছি পৌঁছালো, সাথে সাথে সবগুলো বানরকে বরফের মত ঠান্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হলো। ফলে বানরটা কলা নিতে পারল না।
একটু পরে অন্য আরেকটা বানর কলা ধরতে গেল এবং আগের মত সবগুলো বানরকে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হলো। এই প্রক্রিয়া কয়েকবার চলল। বানরের দল বুঝতে পারল, কলা ধরতে গেলেই ঠান্ডা পানির বিপদ নেমে আসছে। এরপর অন্য কোন বানর যখন কলা ধরতে যাচ্ছে তখন দলের বাকিরা বাধা দিল এবং প্রয়োজনমতো পিটুনি দিল।
এবার পাঁচটা বানরের একটা বানরকে বের করে নতুন একটা বানর দেয়া হলো। নতুন বানরটা স্বভাবগতভাবেই কলা ধরতে গেল এবং বাকিদের কাছ থেকে জোরেশোরে পিটুনি খেলো। এখন আর আগের মত ঠান্ডা পানির শাস্তি নেই। নতুন বানরের কাছে পুরো বিষয়টা অপরিচিত - কলা খেতে চাওয়ার মত নিরপরাধ কাজের ফলস্বরূপ দলের বাকিরা কেন তাকে মারছে বিষয়টা সে বুঝতে পারল না। নতুন বানরটা যে কয়বার চেষ্টা করলো প্রতিবারই বেদম প্রহারে ফিরে আসলো। সে বুঝতে পারলো তার ভাগ্যে কলা নেই।
পরীক্ষা নিরীক্ষার এ পর্যায়ে এসে আগের পুরনো চারটা বানর থেকে একটা বানর সরিয়ে নিয়ে নতুন আরেকটা বানর দেয়া হলো। নতুন বানরটাও কলা ধরতে চেয়ে মার খেলো, এমনটি দ্বিতীয় ধাপে যুক্ত হওয়া বানরটাও পিটুনি দেয়াতে শরিক হলো। মজার বিষয় হলো দ্বিতীয় ধাপে যুক্ত হওয়া বানরটা জানেনা কেন সে পিটুনি খেয়েছিল এবং কেন সে আরেকজনকে মারছে।
এভাবে পুরো পরীক্ষাটা অনেকগুলো ধাপে করা হলো, একপর্যায়ে এমন কোন বানর রইলো না যারা প্রথম ধাপে পানির শাস্তি দেখেছিল। পরিবর্তিতে বানরের দল কোন কার্যকারণ না বুঝেই আগে থেকে সেট করে দেয়া আচরণ প্র্যাকটিস করে যাচ্ছিল।
এন্ড্রু টেইট এই উদাহরণের মাধ্যমে দাবি করছেন, বর্তমান সাধারণ মানুষ “প্রচলিত সত্য” কে (Narrative) কোন প্রশ্ন না করেই কার্যকারণ না বুঝেই মেনে নিচ্ছে।
প্রায় একই রকম একটা অবস্থা চলছে বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্য ব্যবস্থায়
মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম হুমকি সিজারিয়ান সেকশন ক্রমাগত বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০২২ সালে সরকারি হাসপাতালে ৩৬ শতাংশ প্রসব সিজারিয়ান সেকশন এর মাধ্যমে হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে এই হার ৮৩ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সিজারিয়ান সেকশন কোনোভাবেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না।
মাতৃস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত এরকম একটা অস্বাভাবিক বিষয় বাংলাদেশের স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সালে সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল ১৮%, যেটা ২০২২ সালে এসে ৪৫% পরিণত হয়েছে।
পুরো প্রেক্ষাপট ক্রমাগত কেন নেতিবাচক দিকে আগাচ্ছে সেটার কারণ খুঁজতে গেলে আমরা দেখি রিসোর্সের পরিমাণ সেবাপ্রত্যাশীর তুলনায় অপ্রতুল। চিকিৎসা সেবা থেকে ব্যবসায়িক অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের পরিশ্রমবিমুখ লাইফস্টাইলও পরোক্ষভাবে এখানে অবদান রাখছে।