মাতৃত্ব থেকে ইসরাত আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি মাতৃত্ব সাপ্তাহিক পড়ার জন্য।
|
প্রথমেই দুঃখপ্রকাশ করছি বিগত কয়েকটি সপ্তাহ মাতৃত্ব সাপ্তাহিক মেইল পাঠাতে পারিনি। মূলত মাতৃত্ব প্রিনাটাল ক্লাস চালু করা নিয়ে পুরো মাতৃত্ব টীম ব্যস্ত সময় পার করছে।
|
এই ফাঁকে প্রিনাটাল ক্লাস নিয়ে বলে ফেলি। মূলত গর্ভবতী ও হবু মা দের জন্য এই কোর্স (কিছু ক্লাসে বাবারাও জয়েন করতে পারবেন)। গর্ভকালীন সময়টা নানা অজানাতে ভরপুর। একজন মা যেসব শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মাঝে দিয়ে যান, তা নিয়ে আগে থেকে জানানো এবং এবং প্রস্তুতি নেয়ার আয়োজন হয় প্রিনাটাল ক্লাসে। মাতৃত্ব'র প্রিনাটাল ক্লাসের কোঅর্ডিনেটর আফিফা রায়হানা, যিনি আমানি বার্থ থেকে এবিষয়ে সার্টিফায়েড। কোর্সে ভর্তি কার্যক্রম শেষের দিকে, বিস্তারিত এই পাতায় জানতে পারবেন।
|
যারা প্রথমবারের মতো এই মেইল পাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, প্রতি সপ্তাহে আমরা সাইটে প্রকাশিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি আপনাকে মেইল করে দিই। এছাড়াও অন্যান্য লেখাগুলোর লিংক থাকবে। যেটা ভাল লাগে ক্লিক করে পড়তে পারবেন।
|
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন নিয়ে গত ক'বছরে আমাদের মাঝে কিছু সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর বিভিন্ন রকমফের আছে। সত্যি বলতে কি আমি নিজেও জানতাম না, পোস্টপার্টাম ডিঅর্ডারের সবচেয়ে ভয়াবহ স্টেজ হলো পোস্টপার্টাম সাইকোসিস, যেটাকে বিশেষজ্ঞরা গুরুতর মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
|
আমাদের এসপ্তাহের নির্বাচিত লেখাটি এই বিষয়ে, লিখেছেন শময়িতা আলম। শময়িতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে পড়াশুনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে নিজেকে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রস্তুত করছেন।
|
নীলা ও হৃদয় স্বামী – স্ত্রী। তাদের দুজনের সুখের সংসার। বিয়ের ২ বছরের মাথাই তারা সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করে এবং নীলা কনসিভও করে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বাচ্চা হবার পর। বাচ্চা বাসায় নিয়ে আসার পর থেকে নীলা কেমন যেন বদলিয়ে যায়। এই নীলা যেন আগের নীলা নয়। হৃদয় খেয়াল করে নীলা কথায় কথায় কান্না করছে, রেগে যাচ্ছে, চুলায় কিছু দিয়ে ভুলে যাচ্ছে, সবসময় বিরক্তি দেখাচ্ছে, সন্তানের আনন্দ ভুলে গিয়ে কেমন যেন অবসাদে ভুগছে। এই সব বিষয় নিয়ে হৃদয়ও নীলার উপর অনেক বিরক্ত। প্রায়ই তাদের মধ্যে এখন ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া হয়। আস্তে আস্তে দুজনের সম্পর্কের আরও বেশি অবনতি ঘটে।
|
একদিন হৃদয় এসব ব্যাপারগুলো তার কাছের এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করে এবং তখন তার বন্ধুর কাছ থেকে প্রথম জানতে পারে যে, সন্তান জন্ম পরবর্তী মায়েদের অনেক মানসিক জটিলতা হতে পারে। তার বন্ধু তাকে নীলাকে একজন মানসিক ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। হৃদয়ও সিদ্ধান্ত নেয় যে নীলাকে একজন মানসিক ডাক্তার দেখাতে হবে।
|
মানসিক ডাক্তারের কাছে হৃদয় ও নীলা তাদের সমস্যা জানায়। তারা জানতে পারে সন্তান জন্ম পরবর্তী হরমোনাল ইমব্যালেন্স (ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্ট্ররেন হরমন এর মাত্রা অনেক কমে আসে), ব্যালেন্স ডায়েট এর অভাব, পর্যাপ্ত ঘুম এর অভাব, আর্থসামাজিক অবস্থা, নিজস্ব মানসিক অবস্থা, পারিবারিক সহযোগিতার অভাব, আরও অনেক কারনেই সন্তান জন্ম পরবর্তী মায়েদের বিভিন্ন মানসিক মুড ডিসঅর্ডার হতে পারে।
|
নীলা ও হৃদয় এর কাহিনী কাল্পনিক হলেও সমাজে এমন ঘটনা বিরল নয়। তাহলে এখন সন্তান জন্ম পরবর্তী এই মুড ডিসঅর্ডার গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
|
সন্তান জন্ম পরবর্তী এই মুড ডিসঅর্ডার গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
|
১) পোস্টপার্টাম ব্লু/ বেবি ব্লু
২) পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন
৩) পোস্টপার্টাম সাইকোসিস
|
পোস্টপার্টাম ব্লু / বেবি ব্লু
|
প্রথমবারের মতো যারা মা হন তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ মায়েরাই পোস্টপার্টাম ব্লু/ বেবি ব্লুতে ভোগেন। পোস্টপার্টাম ব্লু’তে ভোগা মায়েদের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তা এরকমঃ
|
- ছোট খাটো কারণেই কান্না করেন
- অযথা রাগ ও দুশ্চিন্তা করেন
- কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না
- ঘুমাতে পারেন না
- অবসাদে ভোগেন।
|
এ ধরনের সমস্যা মায়েদের সন্তান জন্মদানের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে হতে পারে এবং ২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। যদি এই ধরনের সমস্যা গুলো ২ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক না হয় তখনি সেটা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এ রূপ নেয়।
|
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসব পরবর্তী বিষন্নতা সন্তান জন্মের ২ সপ্তাহ থেকে ১ বছর এর মধ্যে হতে পারে। কখনো কখনো এই বিষণ্ণতা সন্তান জন্মের আগেও মায়েদের মধ্যে দেখা যায়। শতকরা ২০-৩০ শতাংশ মায়েদের মধ্যে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।
|
যেসব মায়েরা পারিবারিক সহযোগিতা কম পেয়ে থাকে, দাম্পত্য কলহ থাকে, অথবা পূর্ববর্তী কোন বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তার সমস্যা থেকে থাকে, সেসব মায়েদের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে থাকা মায়েরা কোন কিছুর প্রতিই আগের মতন উৎসাহ পান না, এমনকি সন্তানের ব্যাপারেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
|
- কোন কিছুতে ভাল না লাগা
- বিষণ্ণ অনুভব করা
- হতাশ হয়ে পড়া
- খাবারে অরুচি এবং ওজন হ্রাস পাওয়া
- ক্লান্তি বোধ করা
- নিজেকে অসমর্থ ও দোষী ভাবেন
- ঘুমের সমস্যা হওয়া
- অমনোযোগী হয়ে পড়া
- কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তা কিংবা ঘন ঘন মৃত্যু চিন্তা করা
|
এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত বিষন্ন মা সাইক্রিয়াঢ্রিস্ট এবং সাইকোলোজিস্ট এর সাহায্য নেবেন। সাধারণত ভুক্তভোগী মা চিকিৎসার মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
|
পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এ আক্রান্ত মায়েদের মাঝে যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার এরকমঃ
|
- হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রমে ভোগা
- ভ্রান্ত বিশ্বাস লালন করা
- অতিরিক্ত কথা বলা
- বিষণ্ণতায় ভোগা
- সন্দেহ প্রবণতা
- অস্থিরতা
- নিজেকে বা সন্তানকে মেরে ফেলার প্রবণতা
|
শতকরা ৫০০ জন মায়েদের মধ্যে ১ জন পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এ আক্রান্ত হতে পারেন। এটি অত্যন্ত গুরুতর মানসিক সমস্যা। এটি সাধারণত শিশুর জন্মের প্রথম ২ সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে।
|
পোস্টপার্টাম সাইকোসিস জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে সেই কারণে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মনে রাখা প্রয়োজন পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এ আক্রান্ত মায়েরা নিজেদের মানসিক অসুস্থতার কথা নিজেরা নাও বুঝতে পারে, সেই কারণে পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এ আক্রান্ত মায়েদের আশেপাশের মানুষদের এ সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন যাতে তারা অবিলম্বে তাকে একজন সাইক্রিয়াঢ্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যেতে পারেন।
|
সন্তান জন্ম পরবর্তী মুড ডিসঅর্ডার গুলু সম্পর্কে জানা, মায়েদের প্রতি যত্নবান হওয়া, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রয়োজন হলে একজন সাইক্রিয়াঢ্রিস্ট অথবা সাইকোলোজিস্ট এর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া – এর মাধ্যমেই সহজ হবে এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা।
|
গত সপ্তাহের মেইলের পর আমাদের সাইটে প্রকাশিত অন্যান্য লেখাগুলোর লিংক নিচে দিয়ে দিচ্ছি, পছন্দমতো ক্লিক করে পড়ে নেবেন।
|
দীর্ঘ মেইল লিখে ফেললাম। মেইল ভাল লাগলে অন্যকে ফরোয়ার্ড করবেন। একটা খবর জানিয়ে শেষ করছি।
|
মাতৃত্ব'র কমিউনিটি চ্যানেলগুলোয় যোগ দিয়ে প্রিনাটাল ক্লাসের ভর্তি ফী'তে ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। বিস্তারিত জানতে মাতৃত্ব পেইজে মেসেজ দিন।
|
|