মাতৃত্ব সাপ্তাহিকঃ শিশুর অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচর্যা কীভাবে করতে হয়?
Matritto logo

জীবনের জন্য উপকারী জ্ঞান

আসসালামু আলাইকুম।

মাতৃত্ব থেকে ইসরাত আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি মাতৃত্ব সাপ্তাহিক পড়ার জন্য।

কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজন মা বলছিল তার ৫ বছর বয়সী শিশু তাকে এতো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে যে তিনি তার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আমরা নিজেরাও যদি আমাদের আশে পাশে খেয়াল করি, তাহলে দেখবো এই বয়সী শিশুরা অনেক মজার মজার প্রশ্ন সারাদিন করতে থাকে।

আমাদের এসপ্তাহের নির্বাচিত লেখাটি শিশুর অনুসন্ধিৎসু মন বিষয়ে, লিখেছেন শময়িতা আলম। শময়িতা একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছেন এবং ভবিষ্যতের সাইকোলজিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন।

যারা প্রথমবারের মতো এই মেইল পাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, প্রতি সপ্তাহে আমরা সাইটে প্রকাশিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি আপনাকে মেইল করে দিই। এছাড়াও অন্যান্য লেখাগুলোর লিংক থাকবে। যেটা ভাল লাগে ক্লিক করে পড়তে পারবেন।

শিশুদের “কেন” “কিভাবে” টাইপ প্রশ্ন যেন শেষই হয় না। বৃষ্টি কিভাবে হয়? পাখি কিভাবে আকাশে উড়ে? চাঁদ কেন আমার সাথে সাথে যায়? এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন। অনেক সময় দেখা যায় শিশুদের প্রশ্নের উত্তর বড়দের কাছে থাকে না। শিশুদের এসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অনেক সময় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

তবে বড়দের উচিত শিশুদের এসকল প্রশ্ন উৎসাহ নিয়ে, ধৈর্য সহকারে শোনা এবং যতদূর সম্ভব সেগুলোর যুক্তিসঙ্গত উত্তর দেওয়া। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে , শিশুরা যত বেশি প্রশ্ন করে ততো বেশি শিখে। শিশু মনোবিজ্ঞানী পল হ্যা্রিস এর মতে একটি শিশু ২-৫ বছরের মধ্যে গড়ে ৪০,০০০ প্রশ্ন করে থাকে।

শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি প্রশ্ন করে কারণ তারা স্বভাবতই কৌতূহলী হয়। বড়দের বিরক্ত করার জন্য শিশু বার বার প্রশ্ন করছে এমন চিন্তা করা ঠিক না। শিশুদের মনে অনেক অজানা বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকে। তারা কোন কিছু সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই প্রশ্ন করে।

শিশুদের এই অনুসন্ধিৎসু মন আমরা যদি এরিকসন এর সাইকোসোশাল ডেভেলপমেন্ট স্টেজ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করি তাহলে তা সাইকোসোশাল ডেভেলপমেন্ট এর ৩ নম্বর স্টেজ এ পড়ে। এই স্টেজটি হল ইনিশিয়েটিভ/ গিল্ট ( উদ্যোগ/অপরাধবোধ) ।

ইনিশিয়েটিভ/ গিল্টঃ ( ৩-৫ বছর)

এই সময়ে শিশু তার আশেপাশের জগতকে জানতে চায় এবং জ্ঞান অন্বেষণে উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে দেখতে চায়। এই বয়সী শিশুরা সক্রিয় খেলার মাধ্যমে তাদের চিন্তা ও কল্পনার বিস্তৃতি ঘটায় এবং তাদের জ্ঞান তৃষ্ণা মেটানোর জন্য অনেক প্রশ্ন করে।

এ পর্যায়ে শিশুরা যদি অবিভাবক দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অবিভাবকরা যদি তাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাদেরকে বকাঝকা করেন তাহলে শিশুরা নিজেদেরকে ছোট মনে করে। শিশুরা যদি এই সময় এটা অনুভব করে যে তাদের প্রশ্নগুলো অনেক বিরক্তিকর, তাহলে তারা অপরাধবোধে ভোগে। ফলস্বরূপ তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশ ব্যাহত হয়।

এ পর্যায়ে যে সকল শিশু অপরাধবোধে ভোগে, তারা পরবর্তী জীবনেও কম আত্মবিশ্বাসী হয়। তাই এ সময় শিশুদের করা প্রশ্ন ও উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা অনুসন্ধিৎসু ও সক্রিয় মানুষ হিসেবে বড় হয়।

শিশুদের করা সকল প্রশ্নের উত্তর যে সবসময় বড়দের জানা থাকতে হবে এমনটিও নয়। অবিভাবকদের উচিৎ শিশুদেরকে তাদের নিজের প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সৃজনশীল হয়ে গড়ে ওঠে। যেমনঃ শিশু যদি তার মাকে প্রশ্ন করে, “ মা বৃষ্টি কোথা থেকে আসে?” সে ক্ষেত্রে তাকে পাল্টা বলা যেতে পারে, “ এটা খুবই মজার একটা প্রশ্ন। তোমার কি মনে হয়?”

এভাবে পাল্টা প্রশ্ন করার মাধ্যমে অবিভাবকরা যেমন শিশুদের আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে, ঠিক তেমনি প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণের সুযোগ দেওয়ার ফলে শিশুরা জ্ঞান অন্বেষণে অনেক বেশি উদ্যোগী হয়ে ওঠে। তাই শিশুর প্রশ্নের উত্তর সেই মুহুর্তে জানা না থাকলেও এভাবে শিশুকে জ্ঞান অন্বেষণে কৌতূহলী করে তোলা সম্ভব। এমনকি অবিভাবকরা শিশুদের সাথে একসাথে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন।

শিশু যত বেশি প্রশ্ন করবে ততো বেশি জানতে পারবে। তাই অবিভাবকদেরও উচিৎ শিশুকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করে তোলা। এজন্য সহজ উপায় হলো, বাবা-মা নিজেরাই শিশুকে প্রশ্ন করবেন। অন্যকেউ মনে করতে পারেন এই সব ভারী প্রশ্ন তো শিশুর জন্য উপযোগী না, কিন্তু এতে দমে যাওয়ার কিছু নাই। বেশিরভাগ সময় শিশুর বোঝার ক্ষমতাকে আমরা অবমূল্যায়ন (underestimate) করি।

শিশুর অনুসন্ধিৎসু মনকে জাগ্রত করার জন্য উত্তম পদ্ধতি হবে সরাসরি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শিশুর থেকেই উপযুক্ত উত্তর এর ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া, উপযুক্ত ক্ষেত্রে তার প্রশ্নের জবাব দেয়া এবং তাকে প্রশ্ন করা।

শিশুর অনুসন্ধিৎসু মনকে জাগ্রত করার যে পরামর্শ শময়িতা দিচ্ছেন তার সাথে কি আপনি একমত?

আপনার মতামত জানান আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে।

এসপ্তাহের আরো গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো

আমাদের নিউজলেটার কেমন লাগছে জানাবেন। কোন পরামর্শ, সংশোধনী বা নতুন আইডিয়া সাদরে গৃহীত হবে ইনশা আল্লাহ।

মাতৃত্ব পরিবারের একজন হিসেবে আপনি এই মেইল পাচ্ছেন।

আমাদের ঠিকানা

মাতৃত্ব ডট কম
বাসা:১/বি, ভবন: ৭, স্বপ্নডাঙ্গা হাউজিং হাজারিবাগ, ঢাকা-১২০৭
https://matritto.com

Add us to your address book

Want to change how you receive these emails?

You can update your preference or unsubscribe from the list.